শিক্ষাঙ্গন মানুষের মননশীলতা ও চরিত্র গঠনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কিন্তু সেই শিক্ষাঙ্গনই যদি অনিয়মের আঁতুড়ঘর হয়ে যায়, তবে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়াই স্বাভাবিক। এমনই এক নৈরাজ্যমূলক পরিস্থিতির চিত্র পাওয়া গেছে কুড়িগ্রাম জেলার মন্ডলহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে। অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে ইচ্ছেমতো হাজিরা দেন এবং ইচ্ছেমতো বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এর ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম।
সরেজমিন তথ্য ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকালে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মন্ডলহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষক সকাল ১১টার আগে বিদ্যালয়ে আসেন না। আবার দুপুর ২টা বাজলেই তাঁরা বিদায় নেন। নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে দুই-একজন স্যার ছাড়া কেউই সময়মতো আসেন না। তাঁরা ক্লাসে ঠিকমতো পড়ান না। ১১টার সময় এসে ২টায় চলে যান। সামনে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, স্যারদের এমন অবহেলার কারণে আমাদের পড়ালেখার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই অনিয়মের পেছনে সিনিয়র শিক্ষক শফিকুল ইসলাম মিলুর প্রভাব কাজ করছে। তাঁর অভিযোগ মিলু স্যারের ছত্রছায়াতেই বিদ্যালয়ে এই অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, শফিকুল ইসলাম মিলু ভাই সিনিয়র হওয়ার সুবাদে নিজের ইচ্ছেমতো চলেন এবং তাঁর প্রভাবেই অন্যরাও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। যারা সততার সাথে কাজ করতে চান, তাঁরাও এই সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়।
স্থানীয়দের ভাষ্য, মন্ডলহাট উচ্চ বিদ্যালয় একসময় ভালো ফলাফলের জন্য এলাকায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা, অনিয়ম ও অবহেলার কারণে বিদ্যালয়ের সেই ঐতিহ্য আজ বিলীন হতে বসেছে।
এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
আগে এই স্কুল থেকে ভালো রেজাল্ট হতো। কিন্তু এখন শিক্ষকরা এটাকে নিজেদের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের মতো ব্যবহার করছেন। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ আজ হুমকির মুখে। আমরা এই অনিয়মের দ্রুত অবসান চাই।
অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছেন, শিক্ষকদের লাগামহীন কার্যকলাপ যেন আর কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যায় না। তাঁরা দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয়দের দাবি দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিদ্যালয়ের সুশাসন পুনরুদ্ধার করতে হবে। তা না হলে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।